ইসলাম ও বৈরাগ্যবাদ-৪
লিখেছেন লিখেছেন Saidul Karim ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:৩১:৫৯ দুপুর
কম জনশক্তি দিয়ে বিশাল জনগোষ্ঠীকে শাষণ-শোষন করার একমাত্র মাধ্যম হলো মিডিয়া।আজকের বিশ্ব ব্যবস্থা মূলত এটিই প্রমাণ করে।একটি ছোট্ট পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে এটি দ্রুত বুঝতে সহযোগীতা করবে।বিশ্বব্যাপী ইহুদী জনসংখ্যা প্রতি হাজারে ১০জন করে হলে ৭০০কোটি মানুষের ক্ষুদ্র একটি অংশ হলো ইহুদী।দু:খের কারণ হলেও সত্যি,তারা পৃথিবীর ৫০% ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে! কিভাবে?
এটি তাদের শত বছরের গবেষণা ও শ্রমের ফসল।১৮৯৭ সালের ২৯ ও ৩০ অগাস্ট সুইজারল্যান্ডেরবাজিল নগরীতে বিখ্যাত সাংবাদিক, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ড. থিওডর হার্টজাল ( Dr. Theodor Herzel) এর নেতৃত্বে ৩০০ বুদ্ধিজীবী সমবেত হন।কথিত যে,তৎকালীন বিশ্বের ৩০টি ইহুদী সংগঠনের সবচেয়ে বেশি মেধাবী ৩০০জন এতে অংশ গ্রহণ করে।তারা সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে,দুনিয়াকে হাতে নিতে আমাদের দুইটি কাজ করতে হবে-
১.দুনিয়ার সকল স্বর্ণভান্ডার আয়ত্ব করতে হবে।অর্থ ব্যবস্থার জাল বিস্তার করে দুনিয়ার সকল পুঁজি কুক্ষিগত করতে হবে।
২.মিডিয়া আমাদের সে স্বপ্নকে বাস্তবায়নে দ্বিতীয় প্রধান ভূমিকা পালন করবে।এ লক্ষকে সামনে রেখে তারা সেখানে ১৯টি অধ্যায়ে পরিকল্পনাগুলো সাজাই। যা একজন খ্রীস্টান মহিলা চুরিকরে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করে।যার দ্বাদশ অধ্যায়ের সার সংক্ষেপের কয়েকটি নিম্নরুপ:
১.আমারা আমাদের শত্রুদের হাতে এমন কোনো শক্তিশালি সংবাদ মাধ্যম থাকতে দেবনা,যার মাধ্যমে তাদের মতামত সমূহ কার্যকর পন্থায় প্রকাশ করতে পারে।আমরা এমন আইন-কানুন তৈরী করবো যাতে কেউ আমাদের অনুমতি ব্যতীত কিছু প্রকাশ করতে না পারে।তা'ছাড়া আমরা তাদের এমন কোনো সুযোগই দেব না যাতে,আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে কোনো সংবাদ সমাজের কাছে পৌছতে পারে।
২.আমরা যখন যাকে ইচ্ছা সমর্থন করবো। প্রয়োজনে জাতীর অনুভূতিকে উত্তজিত করে তুলব আবার প্রয়োজনে শান্ত করব।
৩.আমাদের মিডিয়া হবে ভারতের দেবতা বিষ্ণুর মত,যার শত শত হাত থাকবে।প্রয়োজন বোধে এমন পত্র-পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতা করবো যেগুলো বিচ্ছিন্নতা,পথভ্রষ্টতা,নৈতিক ও চারিত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়,স্বৈরচারী ও একনায়কদের সমর্থন করে।
৪.আমরা এমন ব্যক্তিদের উৎসাহিত করবো যারা হবে লম্পট এবং তাদের অপরাদের রেকর্ড থাকবে।আমরা বিশ্বময় প্রচারের মাধ্যমে প্রয়োজনে তাদের হিরো বানাবো।
৫.আমরা পৃথিবীকে যে রঙ দেখাতে সিদ্ধান্ত নেবো পৃথিবীসে রঙ দেখতে পাবে।
৬.আমাদের শত্রুদের ধ্বংস করতে প্রথমে তাদের কে মানসিক ভাবে আঘাত করব তাতে কাজ না হলে শারীরিক ভাবে ধ্বংস করবো।
৭.প্রয়োজনবোধে আমরা সত্য ও মিথ্যা খবরাখবর এমনভাবে পরিবেশন করবো,যাতে জাতি ও সরকার সেগুলো গ্রহণ করে নিতে বাধ্য হয়।অবশ্য আমরা এ ব্যাপারে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করবো এবং পরিস্থিতি যথাযথ পরিক্ষা-নিরিক্ষকরেই পা ফেলবো।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যাদের কোনো দেশ ছিলনা তারা এ নীতি গ্রহণ করার পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ঘোষিত বেলফোর ডিক্লারেশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে (ইহুদীরা) ঈসরাইল নামক রাষ্ট্রের মালিক হয়।প্রথমে উল্লেখ করেছি তারা এটি গ্রহণ করেছে ১৮৯৭ সালে ঈসরাইল প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৮ সালে।আমরা আমাদের শত্রুদের ঘৃণা তবে তাদের সম্পর্কে বেখবর হয়ে নয়।আমাদের শত্রুরা যখন আমাদের কে ধ্বংস করার জন্য ড্রোন নিয়ে হামলা করেন তখন আমাদের কাছে ড্রোন অপেক্ষা শক্তিশালি হাতিয়ার না থাকলেও ড্রোন হামলা প্রতিরোধ করার সামর্থ্য রাখতে হবে। তাই হাজার অস্ত্রের একটি 'মিডিয়া' সম্পর্কে তাদের ও আমাদের সামর্থ্য কেমন জেনে নেয়া যাক।
★ রায়টার্স: এটি একটি ইহুদী পরিচালিত বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা। জুলিয়াস রায়টার এ সংবাদ সংস্থার মালিক।তিনি ১৮১৬ সালে জার্মানির এক ইহুদী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।পরে ১৮৫৭ সালে সে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পান। রায়টারের বিশ্বব্যাপী যত সদর দপ্তর আছে তার ৮০% কর্মচারী ইহুদী।
★এসোসিয়েটেড প্রেস: ১৮৪৮ যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি বড়বড় দৈনিক পত্রিকা মিলে এটি প্রতিষ্ঠা করে।যার ৯০%মালিকানা ইহুদীদের।
★ইউনাইটেড প্রেস: ১৯০৭ সালে স্ক্রাইপস ও হাওয়ার্ড নামের দু'জন মার্কিন পূঁজিপতি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।বর্তমানে এটি নিউইয়ির্ক টাইমসের মালিকানাধীন।
★এ.এফ.ফি: ফ্রান্সের ইহুদী পরিবার 'হাভস' এর প্রতিষ্ঠাতা।ফ্রান্সের ৮৫% পত্রিকার মালিক ইহুদী।অথচ ফ্রান্সে ইহুদী জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি।
★ লন্ডন টাইমস: শুরুতে এটি ইহুদীদের ছিল না।পরে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত পূজিপতি রবার্ট মর্দোখ পত্রিকাটি ক্রয় করেন।এই ইহুদী পূঁজিপতি পঁয়তাল্লিশ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে পত্রিকাতি খরিদ করেন।টাকার হিসেবে শুধু পাঁচশ কোটি টাকার কাছাকাছি!
★ সানডে টাইমস: 'লন্ডন টাইমসে'র মালিক রবার্ট মর্দোখ। সাপ্তাহিক সান,নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড,সিটি ম্যাগাজিন তারই মালিকানাধীন। সান পত্রিকার সাপ্তাহিক প্রচার সংখ্যা ৩৮ লাখ!তা'ছাড়া ডেইলী এক্সপ্রেস,নিউজ ক্রনিকেল,ডেইলী মেইল, ডেইলী রোড গার্ডিয়ান,ইভিনইং নিউজ,অবজারভার,সানডে রেডিও,সানডে এক্সপ্রেস,দি সানডে পিপলস সহ আরো অনেক পত্রিকা ইহুদীদের মালিকানায় প্রকাশ হয়।১৯৮১ সালের এক জরিপে দেখা যায়,ব্রিটেনের ১ম থেকে ১৫ তম শীর্ষ দৈনিকগুলোর মালিক ইহুদী।
★বিবিসি: মালেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ড মাহাথির মাহমুদের ভাষায় বিশ্ববেঈমান হলো বিবিসি।যার প্রচার প্রসারে ইহুদীদের পৃষ্ঠপোষকতা সর্বজনগ্রাহ্য।
এ হলো কয়েকটি বিখ্যাত মিডিয়া যা বিশ্বব্যাপী ইহুদিবাদপ্রচার-প্রতিষ্ঠার দায়িত্বেরত।এ ছাড়াও আছে নাটক-ফিল্ম।যে চ্যানেলগুলো দিবা-রাত্রি তাদের অনুষ্ঠান প্রচারের মধ্যমে বিশ্বব্যাপী নগ্নতা,অশ্লীলতা,অপরাধ প্রবণতা,পারিবারিক ভাঙ্গন সৃষ্টি করছে।
১৯২৯ সালে মোশন পিকচার্স রিচার্স কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালকের আহ্বানে ১৯৩২ সালে পর্যন্ত তিন বছর সময়ব্যাপী একটি জরিপ চালানো হয়।এতে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এডার ডেল ১৫শ ছবি নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পান যে, ১০টি বিষয় নিয়ে সাধারণত ছবি নির্মিত হয়েছে। তা হলো-অপরাধ,যৌনতা,প্রেম,রহস্য,যুদ্ধ,শৈশব,ইতিহাস,ভ্রমণ,কমেডি ও সামাজিক প্রোপাগান্ডা।তিনি আরও দেখতে পান যে,১৫শ ছবির প্রায় ১১শ ছবি যৌনতা,অপরাধ ও প্রেম নিয়ে!আজ বুদ্ধিজীবি,শিক্ষাবিদ তথা পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী ব্যক্তি মাত্রাই যে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে শঙ্কাকরে তা হলো 'পর্নোগ্রফি'।যাথেকে কেউ মুক্ত নয়,প্রজন্ম বড়ই ধ্বংসের দারপ্রান্তে।আর এর নির্ভেজাল আবিষ্কারক হল-ইহুদী।এ থেকে যদি বাচার বিকল্প পথ না খোঁজি তবে আমরা আগামীর যে সুন্দর স্বপ্ন দেখছি তা স্বপ্নই থেকে যাবে।
ইহুদী-খ্রীস্টানদের মাঝে ধর্মীয় ও আদর্শগতভাবে চরম বিরোধ থাকা সত্ত্বেও মুসলিম নিধনে তারা ঐক্যবদ্ধ।তারা এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যে,খ্রীস্টান মিশনারীগুলোতেও ইহুদী ধর্ম প্রচার হয়।মুসলিম নিধনে অমুসলিমরা ধর্মীয় বিভেদ ভুলে এক হতে পারে কিন্তু মুসলিমরা 'শীতকালে ঠান্ড পানি' দিয়ে অযূ জায়েজ বা নাজায়েজ শীর্ষক তর্ক-বিতর্কে মারামারিকরে।যা বড় আফসোসের বিষয়।এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইকবালেরএকটি উক্তি স্মরণীয়:
"লাভ-লোকসান এক তোমাদের,এক মঞ্জীল,এক মোকাম,
এক তোমাদের নবী-রাসূল,এক তোমাদের দ্বীন ইসলাম।
এক তোমাদের আল্লাহ এক তোমাদের আল- কুরআন,
আফসোস, হায়, তবুও তোমরা এক নহে মুসলমান!
তোমাদের মাঝে হাজার ফিরকা,হাজার দল ও হাজার মত,এমন জাতি কি দুনিয়ার বুকে খুঁজে পায় মুক্তির পথ।"
পুরো লিখা: http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/11163/Saidul%20Karim/72424#.Vm5k0jN-6zM
বিষয়: বিবিধ
১১৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন